বইয়ের নামেই আসলে বোঝা যায়, পুরো বইটি সাজানোই হয়েছে পুরুষদের সহযাত্রী- সকল নারীদের উদ্দেশ্য করে, তাদেরকে আবারো হারানো গৌরবের দিকে ফিরিয়ে আনতে। ইতিহাস সাক্ষী, ইবাদাত-বন্দেগী হোক আর সৎ কর্মে, দ্বীন ইসলামের প্রসারে হোক বা দান সাদাকায়, কত শত নারী ছাড়িয়ে গিয়েছে পুরুষদেরকেও। সে শিক্ষাগুলো কতটুকু নিচ্ছে আজকের একজন মুসলিমাহ নারী?
বইয়ের পাতায় শুরুতেই এসেছে নবি ইসমাইল আ. এর মা, হাজেরা আ. এর সীমাহীন ধৈর্য্যের কথা। জনমানবহীন প্রান্তরে নবি ইব্রাহিম আ. বুকে পাথর বেঁধে আল্লাহ তা’আলার হুকুমে রেখে যাচ্ছেন স্ত্রী হাজেরা আর শিশু ইসমাইলকে। বিবি হাজেরা আকুল কন্ঠে জানতে চাইলেন, এই কি আল্লাহরই নির্দেশ? নবী ইব্রাহিম ‘হ্যাঁ’ সূচক উত্তর দিতেই বিবি হাজেরা দৃঢ় চিত্তে বলে ওঠেন- “আমি তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি নিশ্চয়ই আমাদের ধ্বংস করবেন না” ।
আল্লাহু আকবার!! এমন পরিস্থিতিতেও যদি কোন রক্ত মাংসের নারী আল্লাহর প্রতি অনুগত থাকে, সবর করে স্থির চিত্তে, তাহলে বর্তমান যামানার নারীদের নিকট লেখকের বিনীত জিজ্ঞাসা- বোন, তাহলে বলো তো, তুমিও কেন পারবে না, জীবনের সকল পরিস্থিতিতে সবরের পরীক্ষায় পাশ করতে? তা যতই কঠিন হোক না কেন?
বইয়ে এসেছে রাসুলুল্লাহ সা. এর প্রিয়তমা প্রথম স্ত্রী, উম্মাহাতুল মুমিনীন, খাদিজা রা. এর দৃঢ় মনোবলের কথা, যিনি সবচেয়ে বিপদের দিনগুলোতে রাসুল সা. এর পাশে থেকে প্রিয় স্বামীকে সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা করে গিয়েছেন। কত সুবিশাল ছিল এই নারীর সম্মান? মুসলিমের এক হাদিসে এসেছে, স্বয়ং জিবরাইল আ. একবার রাসুল সা. এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা ও জিব্রাইল আ. এর পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহনকারী এই নারীকে সালাম পেশ করেছেন। আল্লাহু আকবার!! ভাবা যায় পাঠক এই দৃশ্যটুকু? সাথে দিয়েছেন তাঁকে জান্নাতের মাঝে মণি মুক্তা খচিত বাড়ির অসাধারন এক সুসংবাদ।
লেখকের জিজ্ঞাসা- জান্নাতে এমন অমূল্য বাড়ির সুযোগ, আখিরাতে এমন সুবিশাল সম্মানের হাতছানি তো তোমাদের প্রত্যেকের সামনেও দেওয়া আছে। তোমরা সে পথেই হাঁটছো তো, প্রিয় বোনেরা?
বইয়ে আছে আবু জাহেলের দাসী, সুমাইয়া রা. এর পাহাড়সম ঈমান আর ইসলামের জন্যে অকল্পনীয় আত্নত্যাগের কথা। ইসলামের গ্রহনের কারনে নরাধম আবু জাহেল যাঁর পরিবারের উপরে চালাতো সীমাহীন নির্যাতন। সূর্যের তাপে ঝলসানো আর রক্তাক্ত সারা দেহে আঘাতের চিহ্ন দেখে নবিজি সা. সে পরিবারকে জানিয়ে দেন আগাম জান্নাতের সুংসবাদ। সে আনন্দ বুকে ধারন করেই আবু জাহেলের বর্শার আঘাতে শরীর ছিন্ন ভিন্ন হয়ে সুমাইয়া রা. মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
সপ্রশ্ন জিজ্ঞাসা আবারো আমাদের বোনেদের কাছে, তোমাদেরকে তো দ্বীন ইসলামকে রক্ষার জন্যে এত ভয়াবহ কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় না। তবুও কতো তুচ্ছ কারনেই আজ তোমরা আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে চির সুখ শান্তির জান্নাতটাকে পায়ে ঠেলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত? কেনো?
এছাড়াও বইটিতে আছে মক্কার কাফেরদের বিপরীতে আনসারী নারী, উম্মে শুরাইকের অবিচলতার শিক্ষা, রাসুলুল্লাহ সা. এর খেদমতে নিয়োজিত, আনাস রা. এর মা, উম্মে সুলাইমের বিভিন্ন আত্নত্যাগের কথা, উহুদের যুদ্ধে রাসুল সা. কে প্রতিরক্ষাকারী নারী, উম্মে আম্মারা রা. এর অপূর্ব ঘটনা। বইটিতে সেসব বদ আমলেরও কথা বলেও লেখক সকল বোনদেরকে সতর্ক করেছেন, যা একজন নারীকে টেনে হিঁচড়ে কাল নিয়ে যেতে পারে জাহান্নামের অতল গহবরে। সাথে বইটিতে সযত্নে তুলে ধরেছেন জান্নাতে যাওয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল সমূহের কথাও।
.
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ
বর্তমান সময়ে সমাজে নারী ফিতনার ভয়াবহতা কতটা মারাত্নক, সবারই জানা। এই ধরনের ঈমান ও আমল জাগানিয়া একটি বই আমি মনে করি, নারী পুরুষ নির্বিশেষে অবশ্যই সবার পড়া উচিত, সাথে পরিবারের অন্যদেরকেও পড়ানো উচিত। বোনেরা বিশেষ করে অনেক উপকৃত হবেন চমৎকার প্রচ্ছদের এ বইটি থেকে, ইনশা আল্লাহ ! উম্মাহাতুল মুমিনীনদের কথাসহ প্রচুর সহীহ হাদিসের রেফারেন্সে সাজানো পুরো বইটি পড়ে যে কেউ নিজেদের ঈমান ও আমলের ঘাটতি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারবেন, ইনশা’আল্লাহ। আন্তরিক দু’আ রইলো বইয়ের লেখক, অনুবাদক ও প্রকাশকের জন্যে।
বইয়ের শেষে লেখকের উদ্দাত্ত আহবানের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই সকল বোনদের প্রতি- পর্দাহীনতা আর অশ্লীলতার ফাঁদে পড়ো না, বোন। টিভি, গান আর বিনোদনের দুনিয়ায় ডুবে থেকে লাগামহীন জীবন যাপন করো না। একজন মুমিনা, মুত্তাকি ও দাঈ হিসেবে দুনিয়ার জীবনটাকে সাজাও, আল্লাহ তা’আলার কাছে জান্নাতের মাঝে ঘর তোমাদেরও হবে, ইন শা আল্লাহ।
আল্লাহ সুবহানু ওয়া তা’আলা বলেন,
“ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।” [সুরা তাওবা ৯:৭১ ]২৪