বক্ষমাণ গ্রন্থটি আমাদের মা, উম্মুল মুমিনীন, সকল যুগের সব নারীর আদর্শ, আমীরাতুল কুরাইশ, খাদিজাতুত তাহিরা রাদিয়াল্লাহু আনহার। যার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ আমার হৃদয়ে খাদিজার প্রতি ভালোবাসাকে গেঁথে দিয়েছেন ।”
নবুওয়াতের পনেরো বছর আগে যখন তার সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিয়ে হয় তখন আমাদের আম্মা রা. ছিলেন মক্কার সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী। তার কাফেলা ছিল সমগ্র মক্কার অবশিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাফেলার সমান।
পঁচিশ বছর পর, ইন্তিকালের আগে তাকে মাসের পর মাস অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হয়েছে শিআবে আবু তালিবের অবরুদ্ধ উপত্যকায়। মূলত প্রচন্ড মানসিক চাপ আর খাদ্যাভাবেই জীবনের শেষ দিনগুলোতে একটু একটু করে দুর্বল হয়ে যান দোজাহানের বাদশাহর জীবন সঙ্গিনী, প্রিয়তমা, অভিভাবিকা খাদিজা রা.—আমাদের আম্মা ।
শিআবে আবু তালিবের অবরোধ তুলে নেয়ার কিছুদিনের মাথায় নবুওয়াতের দশম বছরের দশই রমজান অনাহারে ভেঙে যাওয়া শরীরে কুরাইশদের রাজকুমারী, যাকে আল্লাহ জীবিত থাকতে সালাম পাঠিয়েছেন, তিনি ইন্তিকাল করেন।
হযরত খাদিজা রা. এর জীবনের যে দিকটা তাকে পৃথিবীর ইতিহাসের যেকোনো নারীর চাইতে আলাদা করে তোলে তা হল, তার খাঁটি মানুষ চেনার ক্ষমতা এবং সেই মানুষের জীবনের পথকে নিজের জীবনের পথ, সেই মানুষের জীবনের লক্ষ্যকে নিজের জীবনের লক্ষ্য করে নেয়ার জন্য প্রাণ উজাড় করে দেয়া প্রচেষ্টা।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নিজেই নিজেকে অবিশ্বাস করছিলেন, তখন তিনি তাকে বিশ্বাস করেছেন। যখন সারা আরব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাগল, কবি আর যাদুকর বলেছে, তিনি তখন তাকে রাসূলুল্লাহ ডেকেছেন।
তিনি পেলেপুষে বড় করেছেন ইসলামের চতুর্থ খলীফা, নবীজির ঘনিষ্ঠতম আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারীদের একজন হযরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে। তার ভালোবাসা থেকে বাদ যাননি বালক, দাস যাইদ ইবনু হারিসা রাদিয়াল্লাহু আনহু অথবা কৃষ্ণাঙ্গ দাসী উম্মে আইমান বারাকা রাদিয়াল্লাহু আনহা।
জগতের ইতিহাসে অনেক ভালোবাসার গল্প, অজস্র মহাকাব্য আর অগনিত উপন্যাস রচিত হয়েছে স্বার্থক প্রেমের, কিন্তু খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ আর মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহর যে ভালোবাসা তার চিত্রনাট্য ছিল স্বয়ং আল্লাহ জাল্লা শাহানুহুর লেখা।
আমরা মনে রাখব এই অমর ভালোবাসার গল্পকে, মনে রাখব এই চিরস্মরণীয় নারীকে, মনে রাখব তার অবিস্মরণীয় অবদানকে যার ভালোবাসার ছায়ায় মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহ নামের এক ইয়াতিম যুবক রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে পরিনত হয়েছিলেন ।