ফেরা
৳ 137
ফেরা লেখক : নাইলাহ আমাতুল্লাহ, সিহিন্তা শরীফা
আমরা দুইবোন যেহেতু এখন মুসলিম হয়েছি, আমাদেরও যেভাবে হোক সিয়াম রাখতেই হবে। রমাদানে মায়ের অফিস অন্যদিনের চেয়ে আগে ছুটি হবে। সিয়াম ভাঙার সময় মানে ইফতারের আগে মা চলে আসলে কীভাবে কী হবে তা ভাবছিলাম। তারপরও প্রথম দিনের আগের রাতে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে আমরা গোপনে সিয়াম রাখার প্রস্তুতি নিলাম। কিছু শুকনো খাবার আর খেজুর কিনে আমাদের শোয়ার ঘরের বইয়ের শেলফে লুকিয়ে রাখলাম। জীবনের প্রথম সিয়াম রাখতে যাচ্ছি। উত্তেজনায় ঘুমাতে পারছিলাম না আমরা। সে রাতে কোনোরকম বাধা বিপত্তি ছাড়াই রাতের খাবার খেয়ে সলাত পড়ে ঘুমিয়ে পড়লাম দুইজন।
সকালে ঘুম ভাঙল বেলা করে। মা অফিসে। সারাদিন নির্বিঘ্নে সিয়াম পালন করলাম। মা ফোনে জানালেন যানজট থেকে বাঁচতে ইফতারের ঠিক আগে আগে বের হবেন, তখন রাস্তা ফাঁকা থাকে। দুপুরের ভাত-তরকারী নিয়ে প্রস্তুত থাকলাম, মা যেন কোনোভাবে বুঝতে না পারেন আমরা দুপুরে কিছু খাইনি। ছোটোবোন ছাত্রী পড়াতে যেত বিকালে। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হয়ে যেত। সকালে ছাত্রীর স্কুল আর বোনের কলেজে ক্লাস থাকার কারণে ওই সময়টা ছাড়া অন্য সময়ে পড়ানো সম্ভব ছিল না। আমাদের খালার মাধ্যমে ওই ছাত্রীর সাথে পরিচয়। সিয়াম থাকার কথা সেখানে জানানোর প্রশ্নই আসে না। অর্থাৎ ওর ইফতারের সময় খাবার মুখে দেওয়ার কোনো উপায় ছিল না।
সূর্যাস্তের আর বেশি বাকি নেই। কিছুক্ষণ পর আযান দিবে। ওযু করে ভাতের থালা সামনে রান্নাঘরে একা বসে আছি। আস্তে আস্তে চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে। ইচ্ছে করেই আলো জ্বালালাম না। আযান শুরু হলো–
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার!
আল্লাহর নাম নিয়ে পানি মুখে দিলাম। কান্নায় গলা বুজে আসতে লাগল।
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার!
ঝর ঝর করে কেঁদে ফেললাম। কষ্ট আর খুশি মেশানো কান্না। কত সৌভাগ্যবান আমি। বোনের কথা মনে করে খারাপ লাগল। বেচারি কিছু খেতে পেরেছে কি না জানি না। ফেরা
In stock